আন্তর্জাতিক ও সব দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটেও নিষিদ্ধ হচ্ছেন সাকিব!

শঙ্কাটা সত্যি হয় শুক্রবার রাতে। ত্রুটিপূর্ণ অ্যাকশনের কারণে সাকিব আল হাসানের বোলিং নিষিদ্ধ করে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)। ফলে ইংল্যান্ডের আয়োজিত কোনো টুর্নামেন্টে খেলতে পারবেন না সাকিব। ক্রিকেটে অনেক নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ইংল্যান্ড। তবে তার চেয়ে বড় বিষয় একটি বোর্ড সাকিবকে নিষিদ্ধ করলো। ফলে প্রশ্ন ওঠে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও কি একই খড়গ নেমে আসবে কিনা সাকিবের ওপর! আইসিসি’র আইন অনুযায়ী সাকিবের নিষিদ্ধ হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার।

গত সেপ্টেম্বরে ইংল্যান্ডের ঘরোয়া টুর্নামেন্ট কাউন্টিতে সারের হয়ে একটি ৪ দিনের ম্যাচ খেলেন সাকিব। ম্যাচ শেষে মাঠের আম্পায়াররা তার বোলিং অ্যাকশন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। এরপর ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ইংল্যান্ডের লাফবরো ইউনিভার্সিটির পরীক্ষাকেন্দ্রে বোলিং অ্যাকশনের পরীক্ষা দেন সাকিব। ১০ই ডিসেম্বর সেই ফল হাতে পায় ইসিবি। নিয়মানুযায়ী বল ডেলিভারির সময় বোলারের কনুই ১৫ ডিগ্রির বেশি বাঁকা হতে পারে না। সাকিবের কনুই অনুমোদিত সীমার চেয়ে বেশি বেঁকেছে বলে রিপোর্টে এসেছে। তবে তার কনুই কতো ডিগ্রি বাঁকা হয়েছে, তা জানা যায়নি। ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি’র সন্দেহজনক ও ত্রুটিপূর্ণ বোলিং নিয়ে নীতিমালার ১১.৩ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘একটি জাতীয় ক্রিকেট ফেডারেশন যদি একজন বোলারকে তাদের নিজস্ব নীতিমালার অধীনে ঘরোয়া ক্রিকেটে বোলিং নিষিদ্ধ করে এবং সেই নিষেধাজ্ঞা যদি স্বীকৃত পরীক্ষাগারে মানসম্মত বিশ্লেষণী বিধি অনুযায়ী করা হয়, তাহলে সেই নিষেধাজ্ঞাকে আইসিসি আমলে নেবে এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আরোপ করবে।’

জাতীয় দলে সাকিবের খেলা এমনিতেও ঝুলে আছে ভাগ্যের ওপর। রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে আপাতত জাতীয় দলের বাইরে আছেন তিনি। তবে দেশের বাইরে একের পর এক ফ্র্যাঞ্চাইজি খেলে বেড়াচ্ছেন সাকিব। যদিও দেশে ফিরতে না পারায় আসন্ন বিপিএলে তার খেলা নিয়ে আছে অনিশ্চয়তা। ঘরোয়া টুর্নামেন্টের ক্ষেত্রে কী হবে সেটাও নিয়ে আইসিসি’র অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘অতিরিক্ত কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া সব জাতীয় ক্রিকেট ফেডারেশন এবং তাদের অধীনস্থ ঘরোয়া ক্রিকেটেও একই নোটিশ স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর হবে। আইসিসি এবং জাতীয় ক্রিকেট ফেডারেশনগুলো সিদ্ধান্ত আরোপ ও কার্যকরের জন্য সব পদক্ষেপ বিধিসম্মতভাবে নেবে।’ ফলে ইংল্যান্ড যেহেতু নিজেদের ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় নিষিদ্ধ করেছে, তাই অন্য সব দেশের ক্রিকেট বোর্ডের অধীন ঘরোয়া প্রতিযোগিতায়ও সাকিবের বোলিং নিষিদ্ধ হওয়ার কথা। তবে বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলার সুযোগ আছে সাকিবের। নীতিমালার ১১.৫ অনুচ্ছেদ অনুসারে বিসিবির দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে সাকিবের বোলিং নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা আছে। এই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘১১.১ ও ১১.৩ অনুচ্ছেদ অনুসারে সাসপেন্ড হওয়া সত্ত্বেও খেলোয়াড়কে তার জাতীয় ক্রিকেট ফেডারেশন ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় বোলিং চালিয়ে যেতে অনুমতি দিতে পারবে (তবে কোনো বাধ্যবাধকতা থাকবে না)।’ এর আগে সাকিবের প্রায় দেড় যুগের বেশি আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে কখনোই বোলিং অ্যাকশন প্রশ্নবিদ্ধ হয়নি। এখন আইসিসি’র ১১.৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বোলিং অ্যাকশন শুধরে বৈধতা প্রমাণে সাকিব যেকোনো সময় একই ক্রিকেট ফেডারেশনের দ্বারা স্বীকৃত পরীক্ষাগারে পরীক্ষা দিতে পারবেন। সেখানে মানসম্মত বিশ্লেষণী বিধি অনুযায়ী বোলিং অ্যাকশন বৈধ প্রমাণ করতে পারলে আইসিসি সাকিবকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বোলিংয়ের অনুমতি দেবে এবং সব জাতীয় ক্রিকেট ফেডারেশনও তাদের ঘরোয়া ক্রিকেটে বোলিংয়ের অনুমতি দেবে অতিরিক্ত আর কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial