সিরাজগঞ্জ ফিরে পাচ্ছে তার হারানো বাণিজ্যিক গুরুত্ব

তামজিদ রিয়াল  সিরাজগঞ্জ জেলা প্রডিনিধিঃ 
ব্রিটিশ আমলেই সিরাজগঞ্জ ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র। রাজধানী কলকাতার সঙ্গে সরাসরি রেলযোগাযোগ থাকায়, বাংলার পূর্বাঞ্চল ও আসামের সঙ্গে বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল এই শহর। এর ভৌগোলিক সুবিধা ও ব্যবসায়িক গুরুত্বের কারণে সিরাজগঞ্জকে একসময় “দ্বিতীয় কলকাতা” নামে অভিহিত করা হতো।
তবে ব্রিটিশ ভারতের বিভাজনের পর রাজধানী ঢাকায় স্থানান্তরিত হওয়ায় সিরাজগঞ্জ তার পূর্বের বাণিজ্যিক গুরুত্ব হারায়। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায়, একুশ শতকে আবারও বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে সিরাজগঞ্জ।
বর্তমানে ডাবল লাইনের যমুনা রেল সেতু ও যমুনা সড়ক সেতুর মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। যমুনা নদীর উপস্থিতি এ অঞ্চলে কম খরচে নৌ-পরিবহনের বিশাল সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। এই ভৌগোলিক ও পরিবহন সুবিধাকে কেন্দ্র করেই সিরাজগঞ্জের সয়দাবাদ এলাকায় গড়ে উগেছে দেশের সবচেয়ে বড় বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল—সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোন, যার আয়তন প্রায় ১,০০০ একর। একইসঙ্গে, ৪০০ একর জমির ওপর নির্মিত হয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় বিসিক শিল্প পার্ক। পাশাপাশি পরিকল্পনায় রয়েছে একটি বৃহৎ ইপিজেড (রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা)। যমুনা রেল সেতুকে ঘিরে গড়ে উঠছে একটি আধুনিক ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো (ICD)।
যদি সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোয়, তাহলে নিঃসন্দেহে বলা যায়—আগামী ১০ বছরের মধ্যেই সিরাজগঞ্জ পরিণত হবে একটি পূর্ণাঙ্গ শিল্প শহরে। এর ফলে সৃষ্টি হবে লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান, এবং ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য উন্মুক্ত হবে অসংখ্য সম্ভাবনার দ্বার। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে শুধুমাত্র কেনাবেচার গণ্ডিতে নিজেদের সীমাবদ্ধ না রেখে বিভিন্ন সার্ভিস সেক্টর এবং যমুনা নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা যেতে পারে পর্যটন শিল্প। আমাদের আলোচনার মূল বিষয় ছিল—এই খাতকে কিভাবে কাজে লাগানো যায়, কারণ এখানেও তৈরি হতে পারে উল্লেখযোগ্য কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুযোগ।
এই সম্ভাবনাকে কেন্দ্র করেই সফলভাবে আয়োজন করা হয় “উদ্যোক্তা মিলনমেলা ২০২৫”। দিনব্যাপী এই আয়োজনে মূল আকর্ষণ ছিল যমুনা নদীর পাড়ঘেঁষা সিরাজগঞ্জ ইকোপার্ক, সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোন পরিদর্শন (পরিচালক শেখ মনোয়ার সাহেবের আমন্ত্রণে), এবং যমুনায় এক রোমাঞ্চকর নৌভ্রমণ। এর পাশাপাশি অনুষ্ঠিত হয় শিক্ষামূলক সেমিনার, নেটওয়ার্কিং সেশন, স্টার্টআপ প্রদর্শনী, এবং এক জমজমাট বনভোজন।
সিরাজগঞ্জের এই পুনর্জাগরণ কেবল একটি শহরের নয়—এটি আমাদের দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য এক নতুন সম্ভাবনার বার্তা বহন করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial