
সাতক্ষীরা জেলার গ্রামাঞ্চলের সব চায়ের দোকান রাত ১০টার পর বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছে প্রশাসন। রোববার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসনের মিডিয়া সেলের সহকারী কমিশনার এস এম আকাশের সই করা এক প্রেস নোটে বিষয়টি জানানো হয়। এতে বলা হয়, রাত ১০টার পর চায়ের দোকানে ক্যারম খেলা, টিভি দেখা ও তাস খেলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সোমবার থেকে এ আদেশ কার্যকর হবে। এ ঘটনায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে জেলায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ সিদ্ধান্তের ফলে গ্রামীণ জনগণ তাদের পরিবারকে আরও বেশি সময় দিতে পারবে। এটি পারিবারিক সমস্যা কমাতে সহায়ক হবে। এ ছাড়া ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারবে বলেও আশা করা হয়। রোববার বেলা ১১টায় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে সূত্র জানায়।
সদর উপজেলার মাছখোলা গ্রামের অজিয়র রহমান (৫৫) প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে সমর্থন জানান। তাঁর মতে, এক হিসেবে বিষয়টি ঠিক আছে। উঠতি বয়সের ছেলেরা চায়ের দোকানে গিয়ে রাতে আড্ডা বসায়। এখন তারা পড়ালেখায় মন দেবে।
তবে এতে অসন্তোষ প্রকাশ করেন তালা উপজেলার সেনেরগাঁতি গ্রামের চা বিক্রেতা রমজান আলী (৪৫)। তাঁর দোকানে সাধারণত রাত ১১টা পর্যন্ত বেচাকেনা হয়। তিনি প্রশাসনের সিদ্ধান্তের কথা শুনেছেন। তবে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হয়নি জানিয়ে বলেন, এতে তাঁর মতো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।
কলারোয়ার বাটরা গ্রামের রাজন বিশ্বাস মনে করেন, গ্রামের মানুষের একমাত্র বিনোদনের জায়গা চায়ের দোকান। সেই জায়গাটি নষ্ট করে দেওয়া ঠিক হবে না।
মানবাধিকারকর্মী মাধব চন্দ্র দত্তের ভাষ্য, এমন নির্দেশনা মানুষের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ। শ্রমজীবী মানুষ সারাদিন কাজ করার পর একটু বিনোদনের জন্য বাড়ির পাশের চায়ের দোকানে যান। সেখানে নানা মতের মানুষের মেলামেশার সুযোগ সৃষ্টি হয়। দিন দিন সমাজ থেকে বিনোদন উঠে যাচ্ছে। এতে বিনোদনের ক্ষেত্র কমে আসবে। এ ছাড়া দোকানিদের রুটিরুজির ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আজাদ হোসেন বেলালের মতে, গ্রামের একজন মানুষ সারাদিনের পরিশ্রম শেষে চায়ের দোকানে গিয়ে একটু টেলিভিশন দেখে, ক্যারম খেলে রিক্রিয়েশন করে। এটি তাঁর স্বাধীনতা, সারাদিনের বিনোদন। এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত হয়নি। অবিলম্বে এটি প্রত্যাহার করতে হবে। প্রশাসনের উচিত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে ভিন্ন পন্থা খুঁজে বের করা।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদের বক্তব্য জানা যায়নি। তবে রোববারের সভায় এমন সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি বলে জানান পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এমন প্রেস নোট দেওয়ার বিষয়টি জানা নেই। সব ক্ষেত্রে এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন সম্ভবও নয়।
সুত্র : সমকাল