
রামু (কক্সবাজার) প্রতিনিধি:
দীর্ঘদিন ধরে আতঙ্কের রাজত্ব কায়েম করে রাখা কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও ডাকাত শাহীনুর রহমান ওরফে ডাকাত শাহীনকে যৌথ বাহিনীর অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে সেনাবাহিনী। সোমবার গভীর রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র্যাবের সমন্বয়ে এই অভিযান পরিচালিত হয়।
ডাকাত শাহীন দীর্ঘদিন ধরে গর্জনিয়া, ঈদগড়, নাইক্ষ্যংছড়ি এবং পাশ্ববর্তী সীমান্ত এলাকায় সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, গরু চোরাচালান, অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা এবং সশস্ত্র মহড়ার মাধ্যমে জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছিলো। স্থানীয়রা কেউ মুখ খোলার সাহস পেতো না, কারণ তার দলে অস্ত্রধারী সদস্য ছিলো এবং তারা প্রকাশ্যে হুমকি দিতো।
সূত্র জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ বাহিনী সোমবার দিবাগত রাত ২টার দিকে গর্জনিয়ার গভীর পাহাড়ি এলাকায় অভিযান চালায়। দীর্ঘ প্রস্তুতির পর ঘিরে ফেলা হয় শাহীনের আস্তানা। প্রায় দুই ঘণ্টার অভিযানের পর তাকে আটক করা হয়।
সেনা সূত্র জানায়, আটককৃত শাহীনুর রহমানের বিরুদ্ধে রামু ও নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় মোট ১৩টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ৫টি ডাকাতি, ৩টি অস্ত্র, ১টি মাদক এবং ৪টি হত্যা প্রচেষ্টার মামলা অন্তর্ভুক্ত। ২০১৭ সালেও তিনি একবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, তবে জামিনে বেরিয়ে এসে আরও ভয়ঙ্কর রূপে ফিরে আসেন অপরাধ জগতে।
শাহীনের গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়লে পুরো গর্জনিয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন স্থানীয়রা। অনেকে আনন্দে মিষ্টি বিতরণ করেন। স্থানীয় এক প্রবীণ বাসিন্দা বলেন, “আমরা বহু বছর পর রাতে শান্তিতে ঘুমাতে পারবো। এমন অভিযান আরও আগে হলে ভালো হতো।”
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, এই অভিযানের মাধ্যমে গর্জনিয়া এবং আশপাশের এলাকাগুলো আবারও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরে পাবে। তবে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, শাহীন গ্রেপ্তার হলেও তার সহযোগীরা এখনো সক্রিয় রয়েছে। তারা চায়, এই চক্রের বাকি সদস্যদেরও দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক।
উল্লেখ্য, ডাকাত শাহীন শুধু একটি অপরাধী নয়, বরং একটি সন্ত্রাসী সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দিচ্ছিলো, যার শেকড় দেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। অস্ত্র ও মাদকের চোরাচালানসহ সীমান্তবর্তী এলাকায় অপহরণ, মুক্তিপণ আদায় এবং অবৈধ আর্থিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল এই চক্র।
এই সফল অভিযানে সেনাবাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, দেশের নিরাপত্তা ও শান্তি বজায় রাখতে এ ধরনের অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান অব্যাহত থাকবে।
এদিকে, যৌথ বাহিনী সূত্র জানিয়েছে, শাহীনের সহযোগীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং প্রয়োজনে দীর্ঘমেয়াদি অপারেশন চালানো হবে।