বাঁচার তাগিদে কর্মসংস্থানের দাবি শহিদ নিশান খানের স্ত্রী জোহরার

প্রতিবেদন : রুপোকুর রহমান

সাভার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : দুশ্চিন্তা আর আতংকে রাত দিন এক হয়ে যাচ্ছে অন্তঃসত্ত্বা জামেনাতুজ জোহরার।অনাগত সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তিনি দিশেহারা বোধ করছেন। কারণ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সাভারে শহিদ হয়েছেন ব্যবসায়ী নিশান খান। তিনি জামেনাতুজ জোহরার স্বামী। তাদের মোহাম্মদ তোয়াহা নামের পাঁচ বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে । ছোট বেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল আদরের ছেলে তোয়াহাকে মিজানুর রহমান আজহারীর মতো লেখাপড়া শেখাবেন। স্বামী-সন্তান আর সংসার নিয়ে ভালোই দিন কাটছিল জোহরার। তিনি যখন তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা, তখনই শুরু হয় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন। এ আন্দোলনে ঘাতকের বুলেট কেড়ে নিয়েছে ব্যবসায়ী নিশানের প্রাণ। মুহূর্তেই সব স্বপ্ন ভেঙ্গে যায় পরিবারটির।

এখন জামেনাতুজ জোহরা ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। অনাগত সন্তান নিয়ে তার ভবিষ্যত ভাবনা তাকে কুরে কুরে খাচ্ছে। সন্তান আর নিজের ভবিষ্যতের জন্যে কর্মসংস্থানের দাবি অন্তঃসত্ত্বা এ গৃহবধূর।

নিশান খান (৩৩) পেশায় ছিলেন লেকার ব্যবসায়ী। গ্রামের বাড়ী চাঁদপুরের বিষ্ণপুর ইউনিয়নের মনোহরখাদি গ্রামে। তার বাবার নাম হাফিজ খান (৬০) এবং মাতার নাম রওশন আরা বেগম (৫০)। বিউটি, খাদিজা, হাওয়া এবং মাওয়া নামের ৪টি বোন রয়েছে একমাত্র ভাই নিশান খানের। এদের মধ্যে নিশান খান ছিলেন তৃতীয়। বেশ কিছুদিন হলো সাভার পৌরসভার আড়াপাড়া বিনোদবাইদ এলাকার মুনমুন ভিলায় স্ত্রী আর সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫আগস্ট ঘাতকের আঘাতে শহিদ হন নিশান খান।

শহিদ নিশান খানের স্ত্রীর বড় ভাই আতিক খন্দকার বাসস’কে জানান, এলাকায় লেকার ব্যবসায়ী হিসেবে অত্যন্ত সুনাম ছিল নিশান খানের। ভালো ব্যবহার আর সুহৃদ সম্পর্কের কারণেসবাই এক নামেই চিনতো তাকে। ঘটনার দিন ৫ আগস্ট দুপুরের খাওয়া-দাওয়া শেষে বিকেলে কাজের প্রয়োজনে সাভার বাজার রোডে যায় নিশান খান। সেখান থেকে থানা রোডে। থানা রোড থেকে নিশান খান খবর পান তার মামাতো শ্যাালক তানজিল গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তাকে দেখতে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছুটে যায় নিশান খান। সেখানে গিয়েই দেখতে পায় পুলিশ মূহূর্মুহু গুলি করছে। তখন সেখান থেকে দৌড়ে গিয়ে সাভার সরকারি কলেজের সামনে আশ্রয় নেয়। এ সময়ে ঘাতকের বুলেটের আঘাত লাগে নিশান খানের মাথার পেছনের অংশে। স্থানীয়দের সহায়তায় আশংকাজনক অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে মৃত্যু হয় তার।

শহিদ নিশান খানের স্ত্রীর বোন জামাই রাজু গাজী বাসস’কে জানান, নিশান খান সম্পর্কে আমার ভায়রা ভাই। আমাদের মধ্যে চমৎকার সম্পর্ক ছিল।

এছাড়াও পরিবারের সবাই ওনাকে অনেক ভালো জানতো। সকলের সাথে উনি ভালো ব্যবহার করতেন। তার মৃত্যুতে একটি পরিবার আজ দুঃখের সাগরে পড়ে গেলো। ছোট বাচ্চাটা এতিম হয়ে গেলো।আরেক সন্তান ভূমিষ্ঠের অপেক্ষায়। এ অবস্থায় খুব বাজে দিন কাটছে পরিবারটির।

জামেনাতুজ জোহরা মুঠোফোনে বাসস’কে বলেন, ‘ঘাতকের বুলেট আমার স্বামীকে কেড়ে নিয়েছে। আমার একটি ছোট ছেলে রয়েছে। আমি অন্তঃসত্ত্বা। এ অবস্থায় একটি নারী কিভাবে কি করতে পারে তা বুঝতেই পারছেন। তিনি বলেন, যারা আমার স্বামীকে হত্যা করেছে আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

জামেনাতুজ জোহরা আবেগতাড়িত কন্ঠে বলেন, আমার ছেলে মোহাম্মদ তোয়াহা’র বয়স এখন মাত্র পাঁচ বছর। ওর বাবা আর আমার স্বপ্ন ছিল ছেলেকে ইসলামিক স্কলার মিজানুর রহমান আজহারির মতো করে লেখাপড়া করাবো। আমি যেন সেইভাবে ছেলেকে পড়াশোনা করাতে পারি এখন এটাই আমার স্বপ্ন।

এছাড়াও নিজে যেহেতু মাষ্টার্স পাশ তাই আমার যদি একটি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে সন্তানদের নিয়ে ভবিষ্যতে চলতে ফিরতে পারবো।’

শহিদ নিশান খানের মৃত্যুর পর তার গ্রামের বাড়ী চাঁদপুরে নিয়ে তাকে দাফন করা হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে সাভার মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। তার মৃত্যুর পর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে ১ লাখ টাকা আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial